ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব
শ্রীযুক্ত রামচন্দ্র দত্ত( ঠাকুরের অন্যতম গৃহী ভক্ত, পেশায় তিনি একজন ডাক্তার ছিলেন।)❇️গৃহী ভক্ত রামচন্দ্র দত্ত:-
--------------------
যৌবনকালে শিক্ষিত সমাজে অনেকেই ঈশ্বরে বিশ্বাস করেনা। জীবনে ধাক্কা খেয়ে খেয়ে তখন প্রশ্ন জাগে। মনে হয়, কার জন্য এত কষ্ট পাই বার বার, এত ভোগান্তি কেন।
তখন হয়তো কারু জানতে ইচ্ছে করে জন্ম রহস্যের কথা। বেশিরভাগ লোকই সংসার-ঘূর্ণির্তে বদ্ধ হয়ে কলুর বলদের মতো ভাববার সময় পায়না, বা জানবার প্রবৃত্ত হয়না।
রামচন্দ্র দত্ত পড়াশোনার পর সরকারি কেমিস্ট হয়েছিলেন। রক্তামাশায়ের ওষুধ আবিষ্কার করেছিলেন। ছোটবেলা মাকে হারিয়ে বিমাতার সঙ্গে হাঙ্গামা হতে থাকায় আলাদা ঘর করেন।
অতৃপ্ত মনে ব্রাহ্ম সমাজে যেতে শুরু করেন। সেইকালে কেউ হয়তো খ্রিষ্ট ধর্মালম্বী হয়ে গেছেন, কেউ নাস্তিক। এখনও হচ্ছে।
রামবাবু অবশেষে ১৮৭৯ সালে দক্ষিণেশ্বর গিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের দর্শন লাভ করেন। ধীরে ধীরে দৃঢ় বিশ্বাস হয় যে পরমহংসদেব হলেন স্বয়ং ঈশ্বর।
মনে নাস্তিকতার ভাব এসেছিল, তবে সংস্কার কোথা যাবে? মনে মনে শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত ছিলেন। নিরামিষ আহার করতেন।
একদিন ঠাকুর বললেন, তোমায় স্বপ্নে যে মন্ত্র দিয়েছি, সেটি ফিরিয়ে দাও। রামবাবু প্রণাম করে ঠাকুরের চরণে সেই মন্ত্র ফুলের মত অর্পণ করেন। ঠাকুর বললেন দেখ, আর সঙ্গে সঙ্গে রামবাবু তাঁর ইষ্টদেবতা দর্শন করলেন।
করুণাময় ঠাকুর বললেন, তোমার আর কিছু করার দরকার নেই। যা দেখেছ তা স্মরণ করবে, আর এখানে আসার সময় হাতে করে সামান্য কিছু নিয়ে আসবে।
রামবাবু কলকাতার কাছে কাঁকুড়গাছিতে একটি তুলসী উদ্যান তৈরি করেন সাধনা করতে। ঠাকুরকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে তাঁর চরণ স্পর্শ করান স্থানটি পবিত্র করতে।
পরে, পরমহংসদেবের মহাসমাধির পর, শ্মশান থেকে পবিত্র ভস্ম এনে রাখা হয়।
রামচন্দ্র দত্তের জীবনাবসান হলে, ইচ্ছা অনুযায়, তাঁর ভস্ম এনে রাখা হয় সেই উদ্যানেই।
ঠাকুর যে বলতেন, সংসারে থেকেও ঈশ্বর লাভ করা যায়, রামবাবু হলেন তার নজির, যেমন মাস্টার মহাশয় — আরও অনেকেই। মনেতে ত্যাগ থাকলেই হল। নির্লিপ্ত ভাবে সংসারে থাকা।
সংসারে আসা কেবল কিছু কাজের জন্য, হয়ে গেলেই স্বধামে ফেরা যাবে, যেখানে আপনার লোক আছে। তাই তো মৃত্যুতে ভয় না, কষ্ট না, পুনর্মিলনের আনন্দ।❇️
জয় ঠাকুর মা স্বামীজী🙏