আজ ৯ই ডিসেম্বর, আজই সেই দিন। বড় পবিত্রতম আমাদের কাছে।
একশ পঁচিশ বছর আগের কথা। স্বামীজী বেলুড়ে ফিরে এসেছেন কাশ্মীর থেকে। ততদিনে মঠের নতুন দ্বিতল বাড়ি নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। গুরুভাইদের ডেকে বললেন, এবারে নীলাম্বরবাবুর বাগানবাড়ি থেকে নূতন বাড়িতে মঠ স্থানান্তরিত করতে হবে। পূর্ণোদ্যমে শুরু হয়ে গেল ব্যবস্থাপনা।
১৮৯৮ সাল। এদিন ভোরে গঙ্গাস্নান সেরে স্বামীজী প্রবেশ করলেন ঠাকুরঘরে। অনন্তর পূজকের আসনে বসে পুষ্পপাত্রে যতগুলি ফুল-বেলপাতা ছিল, একত্রে দুহাতে তুলে প্রভুর শ্রীপাদপদ্মে অঞ্জলি প্রদান করলেন। তারপর একেবারে ধ্যানস্থ। এইভাবে বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হয়ে গেল। ঠাকুরঘরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে গুরুভ্রাতা, সন্ন্যাসীবৃন্দ ও অন্যান্য ভক্ত-শিষ্যরা স্বাক্ষী থাকলেন এই অপূর্ব দর্শনের।
এবারে বাগানবাড়ি থেকে উত্তরাভিমুখে শুরু হল ছোট একটি শোভাযাত্রা। সামনে স্বামীজী স্বয়ং। ডান কাঁধে ধরে রেখেছেন ঠাকুরের পূতাস্থি পূর্ণ তাম্রপাত্রটি----'আত্মারামের কৌটা'। গঙ্গার তীরে ঘন ঘন শঙ্খধ্বনি ও ঠাকুরের নামে জয়ধ্বনিতে মনে হল পার্শবর্তী জাহ্নবীও যেন নৃত্যে মেতেছে।
যেতে যেতে স্বামীজী শিষ্যকে বললেন,"ঠাকুর আমায় বলেছিলেন, 'তুই কাঁধে করে আমায় যেখানে নিয়ে যাবি, আমি সেখানেই যাব ও থাকব, তা গাছতলাই কি, আর কুটিরই কি!' সেজন্যেই আমি স্বয়ং তাঁকে কাঁধে করে নতুন মঠভূমিতে নিয়ে যাচ্ছি। নিশ্চই জানবি, বহুকাল পর্যন্ত 'বহুজনহিতায়' ঠাকুর ঐ স্থানে স্থির হয়ে থাকবেন।"
নূতন দালানের ঠাকুরঘরে এসে স্বামীজী কাঁধ থেকে আত্মারামের কৌটাটিকে নামিয়ে নির্দিষ্ট আসনে স্থাপন করলেন। অতঃপর ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণামপূর্বক শুরু হল ঠাকুরের পূজা। পূজান্তে প্রজ্বলিত যজ্ঞাগ্নিতে হোম করলেন। পরে সন্ন্যাসীদের সহযোগিতায় পায়েসান্ন তৈরী করে ঠাকুরকে ভোগ নিবেদিত হল। সকলের উদ্দেশ্যে স্বামীজী বললেন,"আপনারা আজ কায়মনবাক্যে ঠাকুরের পাদপদ্মে প্রার্থনা করুন যেন মহাযুগাবতার ঠাকুর আজ থেকে বহুকাল 'বহুজনহিতায় বহুজনসুখায়' এই পুণ্যক্ষেত্রে অবস্থান করে একে সর্বধর্মের অপূর্ব সমন্বয়কেন্দ্র করে রাখেন।" সকলে করজোড়ে প্রার্থনা করতে লাগলেন।
স্বামীজী বিশ্বজয় করে ফেরার সময় শ্রীশ্রীঠাকুরের পোর্সিলিনের পট তৈরী করিয়ে এনেছিলেন। আর নিরঞ্জন মহারাজ তৈরী করিয়ে রেখেছিলেন একটি সিংহাসন। পোর্সিলিনের পটে সেই আসনে বসিয়ে ঠাকুরের পূজা হল। ১৯৩৮ সালে নূতন মন্দিরে ঠাকুরের মূর্তি প্রতিষ্ঠার পরে পট সহ আসনটি নিয়ে যাওয়া হয় গর্ভমন্দিরের দোতলায়, ঠাকুরের শয়নকক্ষে।
বেলুড় মঠে স্বামীজীর ঘরের উত্তর পশ্চিমে দ্বিতল ভবনের সেই আদি মন্দিরটি একশত পঁচিশ বছরের স্মৃতিতে আজও পূর্ণমহিমায় সুবাসিত। ঠাকুরের আসনে শোভা পায় একটি তৈলচিত্র। অনেকেই বলেন 'পুরানো মন্দির'। তাতে কি! শ্রীশ্রীঠাকুর যে বলেছেন, তিনি এখানেই থাকবেন! শতকোটি প্রণাম নিও ঠাকুর।
জয় ঠাকুর জয় মা জয় স্বামীজী জয় গুরুদেব।
✍️ ©️ শুভেন্দু চক্রবর্তী।
#collected