স্বামীজি ও শ্রীশ্রীমা;-
স্বামী বিবেকানন্দ সারদাদেবীকে শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে অভেদ বলে মনে করতেন। পাশ্চাত্যে যাবার আগে স্বপ্নে যখন তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের নির্দেশ পেলেন, তখনও তিনি নিশ্চিত হতে পারেননি ― তাঁর পাশ্চাত্যযাত্রা ঈশ্বরের অভিপ্রেত কিনা ।
তখন তিনি ভাবলেন: " আচ্ছা, শ্রীশ্রীমা তো ঠাকুরের অংশস্বরূপিণী ; তাঁকে একখানি পত্র লিখলে হয় না? তিনি যেরূপ বলবেন, সেরূপই করব।"
মায়ের অনুমতি - সহ পত্র পাবার পর স্বামীজী নিশ্চিন্ত হলেন, বললেন : " আঃ, এতক্ষনে সব ঠিক হলো; মারও ইচ্ছা আমি যাই।" স্বামীজীর ইংরেজি জীবনীতে আছে, মায়ের অনুমতি পাবার পর স্বামীজী সমুদ্রতীরে গিয়ে আনন্দে নেচেছিলেন। তিনি তখন মাদ্রাজে ছিলেন।
আমেরিকা থেকে স্বামী শিবানন্দ ("মহাপুরুষ মহারাজ " নামে যিনি পরিচিত) কে লেখা একটি বিখ্যাত চিঠিতে স্বামীজী মায়ের সম্বন্ধে লিখেছেন : " মা-ঠাকুরন কি বস্তু বুঝতে পারনি, এখনো কেহই পার না, ক্রমে পারবে। শক্তি বিনা জগতের উদ্ধার হবে না। আমাদের দেশ সকলের অধম কেন, শক্তিহীন কেন? ― শক্তির অবমাননা সেখানে বলে। মা- ঠাকুরানী ভারতে পুনরায় সেই মহাশক্তি জাগাতে এসেছেন, তাঁকে অবলম্বন করে আবার সব গার্গী, মৈত্রেয়ী জগতে জন্মাবে। ... এইজন্য তাঁর মঠ প্রথমে চাই। রামকৃষ্ণ পরমহংস বরং যান, আমি ভীত নই। মা- ঠাকুরানী গেলে সর্বনাশ! শক্তির কৃপা না হলে কি ঘোড়ার ডিম হবে! ... আগে মায়ের জন্য মঠ করতে হবে। আগে মা আর মায়ের মেয়েরা, তারপর বাবা আর বাপের ছেলেরা...। মায়ের কৃপা আমার উপর বাপের কৃপার চেয়ে লক্ষ গুন বড়ো। ... ওই মায়ের দিকে আমিও একটু গোঁড়া। মার হুকুম হলেই বীরভদ্র ভূতপ্রেত সব পারে। ... আমেরিকা আসবার আগে মাকে আশীর্বাদ করতে চিঠি লিখেছিলুম, তিনি এক আশীর্বাদ দিলেন...। মায়ের কথা মনে পড়লে সময় সময় বলি, " কো রামঃ" ... রামকৃষ্ণ পরমহংস ঈশ্বর ছিলেন কি মানুষ ছিলেন, যা হয় বলো... কিন্তু যার মায়ের উপর ভক্তি নাই, তাকে ধিক্কার দিও।"
১ মে ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে বলরাম বসুর বাড়িতে ( যা এখন " বলরাম মন্দির" নামে সুপরিচিত) স্বামীজী শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যান্য ত্যাগী ও গৃহী শিষ্যদের উপস্থিতিতে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। ওইদিনই সভা আরম্ভের ঠিক পূর্ব- মুহূর্তে সমবেত শ্রীরামকৃষ্ণ - শিষ্যদের উপস্থিতিতে স্বামীজী শ্রীশ্রীমাকে রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের "সঙ্ঘজননী " বলে নির্দেশ করে দিয়েছিলেন। স্বামীজী উদ্দীপিত কন্ঠে বলেছিলেন : " শ্রীশ্রীমাকে কি রামকৃষ্ণদেবের সহধর্মিনী বলে, আমাদের গুরুপত্নী হিসেবে মনে কর? কিন্তু শুধু তা নয় রে ভাই, আমাদের এই যে সঙ্ঘ হতে চলেছে তিনি তার রক্ষাকর্ত্রী , পালনকারিনী, তিনি আমাদের সঙ্ঘ-জননী।"
জীবনের শেষ দিকে স্বামীজী একদিন মাকে প্রনাম করে বলেছিলেন : " মা , এইটুকু জানি, তোমার আশীর্বাদে আমার মতো তোমার অনেক নরেনের উদ্ভব হবে, শত শত বিবেকানন্দ উদ্ভূত হবে। কিন্তু সেইসঙ্গে আরো জানি, তোমার মত মা জগতে ওই একটিই , আর দ্বিতীয় নেই!"
🙏জয়তু শ্রী ঠাকুর মা স্বামীজী🙏
🏵️🌿🏵️🌿🌺🌿🌺🌿🌻🌿🌻🌿🌼🌿🌼🌿🌷🌿🌷🌿💮🌿💮🌿🌸🌿🌸🌿
Book name:- "আমি মা সকলের মা"
সম্পাদক- স্বামী প্রভানন্দ
🙏🙏🙏🙏
No comments:
Post a Comment