🌼🌿🌼🌿🌼🌿🌼🌿
🏵️অদ্বিতীয় বিবেকানন্দ🏵️
🌸একবার স্বামীজি রাজস্থানের কোন এক স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু কোন কারণে তিনি ট্রেনে উঠতে পারেননি। তখন তিন দিন ওই স্টেশনেই ছিলেন। সেই সময় অনেক লোক তাঁর কাছে আসতেন ও ধর্ম প্রসঙ্গে আলোচনা করতেন। দিনরাত লোকের আসা যাওয়ার অভাব নেই, কথারও শেষ নেই। কিন্তু স্বামীজির খাওয়া হয়েছে কি না, তিনি কিছু খাবেন কি না, কেউই ভুলেও জিজ্ঞাসা করতেন না। এমনি করে দু-দিন দু-রাত কেটে গেল। তৃতীয় দিন, সারাদিন কেটে গেল, রাত্রে অনেক আলোচনার শেষে সকলে যে যার মত চলে গেল।
এমন সময় একজন অতি দীনহীন ব্যক্তি এসে স্বামীজিকে জিজ্ঞাসা করল, 'মহারাজ, আপনি তিন দিন তো অনর্গল কথা বলে চলেছেন, কিন্তু আপনার তো কিছুই খাওয়া জোটেনি, এই দেখে আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি।' স্বামীজি ভাবলেন, দীনের বেশ ধরে স্বয়ং নারায়ণ এসেছেন তাঁর কাছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, 'তুমি আমায় কিছু খেতে দেবে?' সে তখন নম্র স্বরে বলল, 'আমার প্রাণ তো তাই চায়, কিন্তু আমার তৈরি রুটি আপনাকে দেব কি করে? যদি আজ্ঞা করেন তো আমি আটা ডাল এনে দিই, আপনি ডাল-রুটি বানিয়ে নিন।' স্বামীজি তখন নিয়ম করেছিলেন, আগুন ছোঁবেন না, তাই বললেন, 'তোমার তৈরি রুটি আমায় দাও, আমি তাই খাব।' শুনে সে ভয়ে জড়সড় হয়ে গেল। লোকটা খেতড়ি-রাজের প্রজা। যদি রাজা জানতে পারেন যে, সে চামার হয়েও সন্ন্যাসীকে রুটি তৈরি করে খাইয়েছে, তাহলে তার বড় রকমের শাস্তি হতে পারে, এমনকি রাজ্য থেকে বিতাড়িতও হতে পারে। ভয়ের কারণ জানতে পেরে স্বামীজি বললেন, 'ভয় নেই, রাজা তোমাকে শাস্তি দেবেন না।' স্বামীজীর কথায় সে হয়তো একটু বল পেল। তখন সে সাধুসেবার সুযোগ পেয়ে স্বামীজীকে রুটি তৈরি করে দিল। স্বামীজি গিরিশবাবুকে বললেন, 'সে সময় দেবরাজ ইন্দ্র স্বর্ণপাত্রে সুধা এনে দিলেও তেমন তৃপ্তিকর হত কিনা জানি না।' স্বামীজি দেখলেন, দীনহীন চামার শ্রেণীর মানুষটির মতো কত দয়াবান উচ্চ হৃদয়ের ব্যক্তি সামান্য কুঁড়েঘরে বাস করে, সমাজের ভদ্রলোকেরা যাদের ঘৃণার চোখে দেখে থাকে! স্বামীজীকে চামারের হাতে তৈরি রুটি খেতে দেখে স্টেশনের কয়েকজন
ভদ্রলোক বললেন, 'আপনি যে নীচ লোকের ছোঁয়া খাবার খেলেন, এটা কি ভালো হল?' স্বামীজি দৃঢ়স্বরে বলে উঠলেন, 'তোমরা তো এতগুলো লোক তিন দিন ধরে আমায় খুব বকালে, কিন্তু আমি কিছু খেলাম কি না, তার কি খোঁজ নিয়েছিলে? অথচ এই ব্যক্তি ছোটলোক, আর নিজেরা ভদ্র বলে বড়াই করছ? ও যে মনুষ্যত্ব দেখিয়েছে, তাতে ও নীচ হল কি করে?' পরে খেতড়ি-রাজের সঙ্গে দেখা হলে স্বামীজি রাজাকে এই ঘটনা শুনিয়েছিলেন। শুনে রাজা ওই দীন দরিদ্র চামার লোকটাকে ডেকে পাঠালেন। সে তো ভয়েই মরে! কাঁপতে কাঁপতে কোন রকমে রাজার সামনে হাজির হল — না জানি আজ কপালে কি শাস্তি লেখা আছে! কিন্তু মহারাজা তাকে সাধুবাদ দিলেন ও রাজার কৃপায় সেই থেকে তার দারিদ্র্যও দূর হল।
🙏🙏🙏🙏
🙏🙏জয় ঠাকুর মা স্বামীজী 🙏🙏
No comments:
Post a Comment