🌼"যখন যাব তখন একেবারে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়ে যাবো!"🌼
🍁🌿🌼🌻দিনটা ছিলো ১লা জানুয়ারী, ১৮৮৬ সাল, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সেই সময় দুরারোগ্য কণ্ঠরোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং তাঁর শারীরিক অবস্থারও যথেষ্ট অবনতি ঘটেছিল। উত্তর কলকাতার কাশিপুর অঞ্চলের উদ্যানবাটিতে চিকিৎসার সুবিধার জন্য তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছিল।
সেদিন ঠাকুর তার কণ্ঠরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সামান্য শারীরিক সুস্থবোধ করেন এবং একাই কাশিপুর উদ্যান বাটির বাগানে একটু পায়চারী করবেন বলে মনস্থ করেন।
যেহেতু সেই দিনটি গৃহীভক্ত শিষ্য ও অনুগামীদের ছুটির দিন ছিলো তাই তাহারা ঠাকুর কে দেখতে বাগানে জড়ো হচ্ছিলেন।
যখন ঠাকুর বৈকাল ৩টের সময় সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে আসছিলেন ততক্ষণে কমপক্ষে ৩০ জন ভক্ত শিষ্য হলঘর ও বাগানে গাছের নীচে জড়ো হয়েছিয়েলন এবং একে অপরের সঙ্গে বার্তালাপ করছিলেন। ঠাকুর বাগানে তাদের দিকে আসছেন দেখে উদ্যানবাটির বাগানে থাকা ভক্তরা পরম শ্রদ্ধার সাথে দন্ডায়মান হয়ে ঠাকুর কে করজোড়ে প্রনাম করলেন এবং ঠাকুর পশ্চিমের বারান্দার সামনে দিয়ে আসার সময় সেখানকার হলঘরে থাকা ভক্তরাও তাঁকে অনুসরণ করে বাগানে এলেন।
উদ্যান বাটি থেকে প্রধান ফটক যাওয়ার পথের মাঝখানে যখন তিনি এসে পৌঁছালেন তখন তিনি বাগানের গাছের নীচে গিরিশচন্দ্র ঘোষ, রামচন্দ্র দত্ত, অতুলচন্দ্র ঘোষ (গিরিশেচন্দ্রের কনিষ্ঠ ভ্রাতা) প্রভৃতি ভক্তদের দেখতে পেলেন এবং ঠাকুরকে দেখতে পেয়ে তারাও কাছে এসে ঠাকুরকে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন ।
অন্যরা কেউ কিছু বলার আগেই ঠাকুর গিরিশ চন্দ্র ঘোষকে জিজ্ঞাসা করলেন, " গিরিশ তুমি অনেককে আমার অবতার হওয়া নিয়ে অনেক কিছু বলেছো , তুমি আমার মধ্যে কি দেখতে পেয়েছো?" তখন গিরিশচন্দ্র হাতজোড় করে তার গুরুর পদপ্রান্তে নতজানু হয়ে বললেন, "মহাজ্ঞানী মহর্ষি ব্যাস এবং বাল্মীকি যার ঐশ্বর্য পরিমাপ করতে পারেনি, আমার মত তুচ্ছ মানুষ তার সম্বন্ধে কি মন্তব্য করতে পারে!"
ঠাকুর তখন গিরিশের এই সহজ সরল এবং বিশুদ্ধ উত্তরে উদ্বেলিত হয়ে সকলের উদ্দেশ্যে সেই মহান বাণী উচ্চারিত করলেন- "তোমাদের আর কি বলব! তোমাদের চৈতন্য হোক!' এবং সমাধিস্থ হলেন। তখন উপস্থিত শিষ্য ভক্তরা সকলে ঠাকুরের আশীর্বাদ নিলেন এবং পাদস্পর্শ করতে লাগলেন। তখন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর সমাধিস্থ অবস্থায় তাঁর শিষ্য ভক্তদের স্পর্শ করে তাদের অপূর্ব অনির্বচনীয় দৈবিক অনুভূতির অনুভব করালেন। তাঁহার স্পর্শে সেদিন প্রত্যেকের অদ্ভুত কিছু না কিছু অবর্ণনীয় আধ্যাত্মিক অনুভূতি হয়েছিল। এই অপূর্ব অনুভূতির অভিজ্ঞতায় বশীভূত হয়ে শিষ্য ভক্তদের অনেকেই বাকরুদ্ধ হয়ে ঠাকুরের দিকে বিস্ময়দৃষ্টিতে চেয়েছিলেন, কেউ কেউ সেই অনুভূতির ফলে আনন্দ উল্লসিত হয়েছিলেন, কেউবা প্রেমাশ্রুপাত করেছিলেন, কেউ কেউ ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়েছিলেন, অনেকেই দিব্যজ্যোতি দেখেছিলেন এবং অনেকে তাদের পরম আরাধ্য বা ইষ্টের দর্শন পেয়েছিলেন আবার কিছু মানুষ তাদের শরীরের ভিতর এক অপূর্ব দিব্য শক্তির অপ্রতিরোধ্য প্রবাহ অনুভব করেছিলেন। কিছু শিষ্যভক্ত আবার ঠাকুরের আশীর্বাদ প্রাপ্তির জন্য অন্যদেরকেও সঙ্গে এনেছিলেন এবং বাকি শিষ্যরা ঠাকুরকে স্তবপাঠ ও পুষ্পদ্বারা পূজা করেছিলেন।
এই ঘটনাকে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের অন্যতম শিষ্য রামচন্দ্র দত্ত ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, সেই দিন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব হিন্দু পুরাণে বর্ণিত মনোবাঞ্ছা পূর্ণকারী কল্পতরু বৃক্ষে পরিণত হয়েছিলেন। তিনিই এই দিনটিকে কল্পতরু দিবস নাম দিয়েছিলেন, যা পরে "কল্পতরু উৎসব" নামে পরিণত হয়েছিল।
উল্লেখ্য, এই দিন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের গৃহস্থ শিষ্যরাই তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর সন্ন্যাসী শিষ্যেরা সেই দিন তাঁর কাছে ছিলেন না। 🌻🌼🌿🍁
🌼🏵️আজ সেই পরম দিন 1st January, যেদিন ঠাকুরের সেই হাটে হাঁড়ি ভাঙার কথা সত্য প্রমাণিত হয়েছিলো, আজ সেইদিন যেদিন ঠাকুর তার স্বরূপ সকলের কাছে প্রকাশ করেছিলেন🌼🏵️
🌿আজকের দিনে ঠাকুর যেন তার সকল সন্তান সন্ততিদের শুভ মনোবাঞ্ছা পূর্ন করেন!🌿
🙏জয় ঠাকুর মা স্বামীজী🙏
✍️©️রাখল রাজা হাজরা চৌধুরী 🙏❤️
No comments:
Post a Comment