Wednesday, 18 December 2024

শ্রীরামকৃষ্ণ ও যুগধর্ম



 -::"ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও যুগধর্ম"::-


একদিন জনৈক নবাগত ব্যক্তি উদ্বোধনে স্বামী সারদানন্দ মহারাজকে কথাপ্রসঙ্গে বলছেন, আমি সাধুসঙ্গ করতে এসেছি । স্বামী সারদানন্দ মহারাজ বললেন, তা তো করতে এসেছ, কিন্তু ঠাকুর যখন দক্ষিণেশ্বরে ছিলেন, দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ির ঠাকুর চাকর বামুন চব্বিশ ঘণ্টা তাঁর সঙ্গে থাকত এবং  দক্ষিণেশ্বরবাসী পাড়াপ্রতিবেশী যারা সর্বদা সেখানে আসত, ঠাকুরকে দেখত, তাদের কারো জীবনে যে বিশেষ কিছু পরিবর্তন হয়েছে এমন দেখা যায়নি । সুতরাং ঠাকুরের প্রদীপ্ত সান্নিধ্যে থেকেও তাঁকে জানতে পারা যায়নি । সেক্ষেত্রে আমরা তাঁকে বুঝে ফেলব এ কল্পনা একেবারে অলীক, আকাশকুসুমের মতো । অবতারকে কেউ বুঝতে পারে না । অবতার সম্বন্ধে ঠাকুর বলছেন, একরকম গাছ আছে জান ? ঠিক দেখতে গাছের মতো, ডালপালা ফলফুল সব হয়, কিন্তু সেটি কি গাছ তা কেউ জানে না । তাই লোকে তাকে বলে অচিন গাছ । কেউ চেনে না এই জন্য তার নাম অচিন । অবতার যখন আসেন তিনি ঐরকম অচিন গাছ হয়েই আসেন । আমাদের সঙ্গে মানুষের মতো ব্যবহার করেন, কিন্তু তিনি মানুষ হয়েও যে মানুষ নন একথা বুঝতে পারে কে ? তাঁর কৃপায় যে তাঁর স্বরূপ ধারণা করবার চেষ্টা করে একটু সার্থকতা লাভ করেছে সে পারে । তার মাপকাঠি দিয়ে সে যখন বুঝতে যায়, সেই সীমিত মাপকাঠি দিয়ে যতটুকু বোঝা সম্ভব ততটুকুই বুঝতে পারে ।

একটি উপদেশে ঠাকুর বলছেন যে, একজন জহুরি তার ভৃত্যকে একটি বহুমূল্য রত্ন দিয়ে তার বাজারদর যাচাই করে আসতে বললে । সে বাজারে যেখানে তরিতরকারি বিক্রি হয় সেখানে গিয়ে বেগুনওয়ালাকে বললে, এটার কি দাম দেবে বল তো ? বেগুনওয়ালা বললে, বেশ চক্‌চক্‌ করছে, মন্দ না তো । তা আমি ওর জন্য এক সের বেগুন দিতে পারি । যে বিক্রি করতে এসেছে সে বললে, আর একটু বাড়াও না । ‘না বাপু, আর একটাও নয় ।’ সে ফিরে এসে মণিবকে বললে, এক সের বেগুন দেবে বললে । তারপর তিনি আর একটু বড়দরের ব্যাপারির কাছে পাঠালেন— সে কি বলে । সে আর একটু মাত্রা বাড়িয়ে বললে । তারপরে বললেন, এইবার একজন ভাল জহুরির কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা কর । জহুরির কাছে যেতে সে দেখেই বললে, এ তো অমূল্য জিনিস, এ তুমি কোথায় পেলে ? আমার যত সম্পত্তি আছে সব বিক্রি করেও এর দাম আমি দিতে পারব না । যে জহুরি জহর চেনে সে এই কথাটি বুঝতে পারে, কিন্তু সেরকম জহুরি কজন আছে ? আমরা সাধারণ মানুষ অবতার সম্বন্ধে কতটুকু বুঝতে পারি ? কিন্তু অবতারকে জানবার সামর্থ্য যদি আমাদের না-ই থাকে তাহলে অবতারের আমাদের কাছে আসার সার্থকতা কি ? তাঁর আসা না আসা তো সমান হয়ে যাচ্ছে । তা নয় । ভগবান মানুষের মধ্যে মানুষের বেশে আসেন, আর তাঁর এই আসার ফলে মানুষের একটা নতুন দৃষ্টি উন্মোচিত হয় । সে তার মনুষ্যত্বের চরম আদর্শ দেখতে পায় । সেই আদর্শ সম্বন্ধে তার ধারণা যতটুকু ততটুকুর ভিতর দিয়ে সে দেখে । ক্রমশঃ এই ধারণার বিস্তার হতে থাকে । যে বেগুন বিক্রি করছে তার চেয়ে যে কাপড় বিক্রি করছে তার ধারণা একটু বেশি । আর জহুরি যে, তার ধারণা আরও বেশি । এই রকম শ্রীরামকৃষ্ণকে বুঝবার জন্য আমরা নিজের নিজের ছোট্ট মাপকাঠি দিয়ে বিচার করে দেখতে গিয়ে দেখি মাপে কুলোয় না ।


    "স্বামী ভূতেশানন্দ।"


(★এরকম পোস্ট নিয়মিত পেতে ফেসবুক পেজটি ফলো করে রাখুন ★)

দিব্যত্রয়ী - The Holy Trio 



No comments:

Post a Comment

শ্রীরামকৃষ্ণ ও তোতাপুরী

  তো তাপুরী যখন দক্ষিণেশ্বরে এলেন তখন তিনি মধ্যবয়সী প্রৌঢ়, তিনি মন্দির চত্বরে পৌঁছেই প্রথমে গেলেন ঘাটের কাছে, সেখানে তখন অনেকেই বসে ছিলেন,...