শ্রীরামকৃষ্ণ বলেন : "স্বাধীন ইচ্ছা-ফিচ্ছা কারও কিছু কি আছে রে ? ঈশ্বরেচ্ছাতেই চিরকাল সব হচ্ছে ও হবে ৷ মানুষ ঐ কথা শেষকালে বুঝতে পারে ৷ তবে কি জানিস, গরুটাকে লম্বা দড়ি দিয়ে খোঁটায় বেঁধে রেখেছে — গরুটা খোঁটার এক হাত দূরে দাঁড়াতে পারে, আবার দড়িগোছটা যত লম্বা ততদূরে গিয়েও দাঁড়াতে পারে ৷ মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাটাও ঐরূপ জানবি ৷ গরুটা এতটা দূরের ভিতর যেখানে ইচ্ছা, যতটা ইচ্ছা ব্যবহার করুক, বলে ছেড়ে দিয়েছেন ৷ তাই মানুষ মনে করছে সে স্বাধীন ৷ দড়িটা কিন্তু খোঁটায় বাঁধা আছে ৷ তবে কি জানিস ? তাঁর কাছে কাতর হয়ে প্রার্থনা করলে, তিনি নেড়ে বাঁধতে পারেন, দড়িগোছটা আরও লম্বা করে দিতে পারেন, চাই কি গলার বাঁধন একেবারে খুলেও দিতে পারেন ৷"
শুনে শ্রোতারা বললেন, তাহলে তো সাধনভজন করাতে মানুষের হাত নেই ? আর, তাহলে তো সকলেই বলতে পারে — আমি যা কিছু করছি তাঁর ইচ্ছাতেই করছি ৷ এই পরের যুক্তিটি আমাদের মধ্যে অনেকেই ব্যবহার করতে ভালবাসেন ৷
শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন : "মুখে শুধু বললে কি হবে রে ?....কাঁটায় হাত পড়লেই কাঁটা ফুটে 'উঃ' করে উঠতে হবে ৷ সাধনভজন করাটা যদি মানুষের হাতে থাকত, তবে তো সকলেই তা করতে পারত ৷ তা পারে না কেন ? তবে কি জানিস, যতটা শক্তি তিনি তোকে দিয়েছেন ততটা ঠিক ঠিক ব্যবহার না করলে তিনি আর অধিক দেন না ৷ ঐ জন্যই পুরুষকার বা উদ্যমের দরকার ৷ দেখ না, সকলকেই কিছু না কিছু উদ্যম করে তবে ঈশ্বরকৃপার অধিকারী হতে হয় ৷....( তাঁর উপর নির্ভর করে ) কিছু কিছু উদ্যম করতেই হয় ৷"
বুঝিয়ে দিলেন কৃপার রাজ্যেও উদ্যম ও পুরুষকারের স্থান আছে ৷ ওটিই চাই ৷
স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলতেন : "কৃপা মানে 'করে পাওয়া' ৷ অর্থাৎ সাধনা করলে কৃপা আসে ৷ এই প্রসঙ্গে শ্রীমায়ের একটি কথাও উল্লেখযোগ্য ৷ মা বলছেন : "ইচ্ছে হলেই তো হয় না ৷ ইচ্ছে পূরণ তো মানুষের হাতে নয় ৷ তাঁর ইচ্ছায় সব হয় ৷"
— স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ ৷
🙏🏻❤️ জয় ঠাকুর মা স্বামীজী ❤️🙏🏻
No comments:
Post a Comment