Tuesday, 23 January 2024

মানসপুত্র নেতাজী



 🌿 মানসপুত্র নেতাজী 🍁


🌻১৯০২ সালের জানুয়ারীতে সুভাষচন্দ্রের পিতা তাঁকে কটকের মিশনারী স্কুলে ভর্তি করে দিলেন, পুত্রের প্রাথমিক বিদ্যা লাভের জন্য। কিন্তু মাত্র পাঁচ মাস পরে অর্থাৎ ১৯০২ সালের জুলাই মাসে এক কঠিন পীড়ায় কাতর হয়ে পড়লেন, পাঁচ বছর ছয় মাস কয়েকদিন বয়সের শিশু সুভাষ।


কটকে তখন নামকরা ডাক্তারের অভাব সর্বজনবিদিত। তবু তার মধ্যেই, ভালো ভালো ডাক্তারের এমনকি শেষ পৰ্যন্ত কলকাতা থেকেও বড় ডাক্তারের ব্যবস্থা করেছিলেন জানকীনাথ বসু। কিন্তু ঠিক ৪ঠা জুলাইয়ের রাত্রে সুভাষের অবস্থা অত্যন্ত চরমে উঠলো -- জীবন ও মৃত্যুর প্রতিযোগীতা আরম্ভ হল।


সেদিন সন্ধ্যা থেকেই বাদলের বারিধারা বোধকরি আকুল হয়ে কেঁদেছিলো; ক্ষণে ক্ষণে ক্ষীণ চাঁদ বিস্ময় বিস্ফারিত নেত্রে উঁকি মেরে দেখতে চেষ্টা করছিল শিশু সুভাষের অসাড় নিস্পদ দেহখানা। রাত্রি প্রায় তখন ন'টা। আকস্মাৎ ! ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলেন 'গৌরিক উত্তরীয় পরিধানে এক সুদর্শন দিব্যপুরুষ'। চেতনাহীন সুভাষের পিতা ও মাতা এই দৃশ্য দেখে হতবাক !


ভাবগম্ভীর সেই 'দিব্যপুরুষ' চেতনাহীন সুভাষের বক্ষস্থলে ধীরে ধীরে বার কয়েক হাত বুলিয়ে দিয়ে তিনি নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। কাউকে কোনো কিছু বলবার অবকাশও দিলেন না -- ঐ সুদর্শন দিব্যপুরুষ। ঐ ন'টা দশ মিনিটে একটা চরম অবস্থাকে অতিক্রম করে সুভাষ যেন পুনঃজন্ম লাভ করলেন।


আরো আশ্চৰ্য্য ! ঐ ১৯০২ সালের ৪ঠা জুলাই শুক্রবার স্বামী বিবেকানন্দ মহাসমাধি লাভ করলেন। ..... এ এক অতি আশ্চৰ্য্য যোগাযোগ ! হয়তো মহাসমাধির পূর্বে আপন আত্মাকে স্বামীজী সুভাষের দেহে দিয়ে গেলেন ! আত্মা অবিনশ্বর -- তাই সেই আত্মা সুভাষের দেহে প্রাণ পেল। স্বামীজী ও সুভাষ তাই একই আত্মার ভিন্ন দুটি লীলা বলা চলে। এই ঘটনার পর থেকেই সুভাষ ক্রমে সুস্থ হয়ে উঠতে লাগলেন।


পরমপুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেব যেমন নরেন্দ্রনাথকে স্বামী বিবেকানন্দ'য় পরিনত করেছিলেন -- ঠিক তেমনভাবে স্বামীজীও সুভাষচন্দ্রকে বিশ্বপিতায় রূপান্তরিত করে দিয়ে গেলেন।🏵️


🌿নেতাজী তাঁর আদর্শ স্বামীজী সম্বন্ধে বলছেন.........


★"আজ তিনি জীবিত থাকলে, আমি তাঁর চরণেই আশ্রয় নিতাম। আজ যদি স্বামীজী জীবিত থাকতেন, নিশ্চয়ই তিনি আমার গুরু হতেন অর্থাৎ তাঁকে আমি নিশ্চয় গুরুপদে বরণ করতাম।"


★"শ্রীরামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দের নিকট আমি যে কত ঋণী তাহা ভাষায় কী করিয়া প্রকাশ করিব? তাঁহাদের পুণ্য প্রভাবে আমার জীবনের প্রথম উন্মেষ। চরিত্রগঠনের জন্য ‘রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ সাহিত্য’ অপেক্ষা উৎকৃষ্ট সাহিত্য আমি কল্পনা করিতে পারি না।"


★"বিবেকানন্দের কথা বলতে গেলে হারিয়ে ফেলি নিজেকে। কে বুঝবে তাঁকে -কে বুঝেছে তাঁকে? অসম্ভব। সুগভীর তিনি, জটিল, ঋদ্ধময়। ত্যাগে বেহিসেবী, কর্মে বিরামহীন, প্রেমে সীমাহীন, জ্ঞানে সমুদ্রগভীর, সমালোচনায় অগ্নিবর্ষী, আর সারল্যে -শিশু -একেবারে শিশু। এ জগতে তাঁর তুল্য কেউ নেই, কেউ নয় ...আমি কে, যে বলব তাঁর কথা?"

                                       —নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু🌿 


🌟আজ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর শুভ জন্মদিনে জানাই বিনম্র প্রণতি।

🧡জয় হিন্দ!!!


🙏🧡শুভ জন্মদিন হে নেতাজী ❤️ 🙏


জয় স্বামীজী 

জয় নেতাজী 

#

(সংগৃহীত)


🌿🌻🙏🏻জয় দিব্য ত্রয়ী 🙏🏻🌻🌿

🌿🍁🌿🍁🌿🍁🌿🍁🌿🍁🌿🍁

Thursday, 18 January 2024

স্বাধীন ইচ্ছা

 


মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা বলে কিছু আছে কিনা — এই নিয়ে স্বামী নিরঞ্জনানন্দের সঙ্গে স্বামী সারদানন্দের একদিন অনেকক্ষণ আলোচনার পর তাঁরা শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে যান প্রশ্নটির মীমাংসার জন্য ৷


শ্রীরামকৃষ্ণ বলেন : "স্বাধীন ইচ্ছা-ফিচ্ছা কারও কিছু কি আছে রে ? ঈশ্বরেচ্ছাতেই চিরকাল সব হচ্ছে ও হবে ৷ মানুষ ঐ কথা শেষকালে বুঝতে পারে ৷ তবে কি জানিস, গরুটাকে লম্বা দড়ি দিয়ে খোঁটায় বেঁধে রেখেছে — গরুটা খোঁটার এক হাত দূরে দাঁড়াতে পারে, আবার দড়িগোছটা যত লম্বা ততদূরে গিয়েও দাঁড়াতে পারে ৷ মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাটাও ঐরূপ জানবি ৷ গরুটা এতটা দূরের ভিতর যেখানে ইচ্ছা, যতটা ইচ্ছা ব্যবহার করুক, বলে ছেড়ে দিয়েছেন ৷ তাই মানুষ মনে করছে সে স্বাধীন ৷ দড়িটা কিন্তু খোঁটায় বাঁধা আছে ৷ তবে কি জানিস ? তাঁর কাছে কাতর হয়ে প্রার্থনা করলে, তিনি নেড়ে বাঁধতে পারেন, দড়িগোছটা আরও লম্বা করে দিতে পারেন, চাই কি গলার বাঁধন একেবারে খুলেও দিতে পারেন ৷"


শুনে শ্রোতারা বললেন, তাহলে তো সাধনভজন করাতে মানুষের হাত নেই ? আর, তাহলে তো সকলেই বলতে পারে — আমি যা কিছু করছি তাঁর ইচ্ছাতেই করছি ৷ এই পরের যুক্তিটি আমাদের মধ্যে অনেকেই ব্যবহার করতে ভালবাসেন ৷


শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন : "মুখে শুধু বললে কি হবে রে ?....কাঁটায় হাত পড়লেই কাঁটা ফুটে 'উঃ' করে উঠতে হবে ৷ সাধনভজন করাটা যদি মানুষের হাতে থাকত, তবে তো সকলেই তা করতে পারত ৷ তা পারে না কেন ? তবে কি জানিস, যতটা শক্তি তিনি তোকে দিয়েছেন ততটা ঠিক ঠিক ব্যবহার না করলে তিনি আর অধিক দেন না ৷ ঐ জন্যই পুরুষকার বা উদ্যমের দরকার ৷ দেখ না, সকলকেই কিছু না কিছু উদ্যম করে তবে ঈশ্বরকৃপার অধিকারী হতে হয় ৷....( তাঁর উপর নির্ভর করে ) কিছু কিছু উদ্যম করতেই হয় ৷"

বুঝিয়ে দিলেন কৃপার রাজ্যেও উদ্যম ও পুরুষকারের স্থান আছে ৷ ওটিই চাই ৷


স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলতেন : "কৃপা মানে 'করে পাওয়া' ৷ অর্থাৎ সাধনা করলে কৃপা আসে ৷ এই প্রসঙ্গে শ্রীমায়ের একটি কথাও উল্লেখযোগ্য ৷ মা বলছেন : "ইচ্ছে হলেই তো হয় না ৷ ইচ্ছে পূরণ তো মানুষের হাতে নয় ৷ তাঁর ইচ্ছায় সব হয় ৷"


                                        — স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ ৷


🙏🏻❤️ জয় ঠাকুর মা স্বামীজী ❤️🙏🏻

শ্রী রামকৃষ্ণদেবের যীশু দর্শন

 


ভগবান রামকৃষ্ণ দেবের গৃহী ভক্ত যদুলাল মল্লিকের বাগান বাড়িতে ঠাকুর(রামকৃষ্ণ) বেড়াতে গেলে উপস্থিত কর্মচারীরা বাবুদের বৌঠক খানা খুলে ঠাকুরকে সেখানে বসতে অনুরোধ করেন।ঐ বৈঠক খানায় অনেক সুন্দন সুন্দর ছবি ছিল।তার মধ্যে মা মেরীর কোলে শিশুযীশুর একখানি ছবিও ছিল।এক দিন ওই ঘরে বসে ঠাকুর ছবিখানি তন্ময় হয়ে দেখছেন আর যীশুর কথা ভাবছেন, 

এমন সময় ছবিটি যেন জিবন্ত জ্যোতির্ময় হয়ে উঠল ও সেই অদ্ভুত দেবমাতা ও দেবশিশুর অঙ্গ থেকে অনেক জ্যোতিরশ্মি বেরিয়ে ঠাকুরের ভেতর ডুকে যেতে আরম্ভ করল।সেই সঙ্গে জন্মগত হিন্দুসংস্কারসমূহ লীন হয়ে গিয়ে যিশুখ্রিস্ট ও তার প্রবর্তিত সম্প্রদায়েরর প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা বিশ্বাসে ঠাকুরের মন ভরে যেতে থাকল।তিন দিন পর্যন্ত ঠাকুরের এই ভাব ছিল।তিন দিন পড়ে যখন পঞ্চবটি তলায় বেড়াচ্ছেন তখন দেখলেন 

তখন দেখলেন সুন্দর গৌড়বর্ণ এক দেবমানব স্থির দৃষ্টিতে ঠাকুরের দিকে এগিয়ে আসছেন।দেখতে দেখতে সেই মূর্তি কাছে এগিয়ে এল,এবং ঠাকুরের পবিত্র অন্তঃকরণ থেকে আপনিই ধ্বনিত হতে লাগলো -'ঈশামসি' অর্থাৎ ভগবান যিশু। যিশুখ্রিস্ট এসে ঠাকুরকে আলিঙ্গন করলেন ও ঠাকুরের শরীরে লীন হয়ে গেলেন, ভাবাবিষ্ট অবস্থায় ঠাকুর বাহ্যজ্ঞান হারালেন। এইভাবে প্রত্যক্ষ দর্শন লাভ করে ঠাকুর স্থিরনিশ্চয় হয়েছিলেন যে,যিশুখ্রিস্ট একজন অবতার-পুরুষ।।


ঠাকুরের দেহে যীশুর লীন হয়ে যাওয়ার ঘটনা সাক্ষরাখে যে ঠাকুর ও যীশু অভেদ আর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই, 

রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের বিভিন্ন শাখায় ও গৃহীভক্তরা তাদের গৃহে যীশু আরাধনা করেন।

এটি বস্তুত ঠাকুরের আরাধনা হিসেবেই গন্য করা হয়।।


#collected 


🎈🎁জয় ঠাকুর মা স্বামীজী ❤️🙏🏻


সবাইকে শুভ বড়দিনের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাই🙏🏻❤️


ঠাকুর সকলের মঙ্গল করুন❤️🙏🏻

রামকৃষ্ণ মিশনে যীশুপুজোর উৎস সন্ধানে

 



রামকৃষ্ণ মিশনে যীশুপুজোর উৎস সন্ধানে:-

_________________________________


“বিভিন্ন দর্শনের তুলনায় দেখা যায়, হিন্দুদর্শনের প্রবণতা ধ্বংস করা নয়, বরং প্রত্যেক বিষয়ে সমন্বয় সাধন করা। যদি ভারতে নতুন কোন ভাব আসে আমরা তার বিরোধিতা করি না, বরং তাকে আত্মসাৎ করে নিই, অন্যান্য ভাবের সঙ্গে মিলিয়ে নিই... তাই আমরা কোন ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থকে প্রত্যাখ্যান করতে পারি না।... পৃথিবীর যেখানেই দেখবে অসাধারণ কোন পবিত্র মানব মানুষের উন্নতির জন্যে চেষ্টা করছেন, জেন—তাঁর মধ্যে ভগবানই রয়েছেন। অতএব বুঝতে পারছ, কেন আমরা কোন ধর্মের সঙ্গে লড়াই করি না। আমরা কখনও বলি না, আমাদের ধর্মই মুক্তির একমাত্র রাস্তা। যে-কোন মানুষ সিদ্ধাবস্থা লাভ করতে পারে—তার প্রমাণ? প্রত্যেক দেশেই দেখি পবিত্র সাধু পুরুষ রয়েছেন, আমার ধর্মে জন্মগ্রহণ করুন বা না করুন—সর্বত্র সদ্ভাভাবাপন্ন নরনারী দেখা যায়। অতএব বলা যায় না, আমার ধর্মই মুক্তির একমাত্র পথ। ‘অসংখ্য নদী যেমন বিভিন্ন পর্বত থেকে বেরিয়ে একই সমুদ্রে তাদের জলধারা মিশিয়ে দেয়, তেমনি বিভিন্ন ধর্ম বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্ভূত হয়ে তোমারই কাছে আসে’—এটি ভারতে ছোট ছেলেদের প্রতিদিনের একটি প্রার্থনার অংশ। যারা প্রতিদিন এই ধরনের প্রার্থনা করে, তাদের পক্ষে ধর্মের বিভিন্নতা নিয়ে মারামারি করা একেবারেই অসম্ভব।”


— স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা/পঞ্চম খণ্ড/ভারত-প্রসঙ্গে/হিন্দু ও খ্রীষ্টান/পৃষ্ঠাঃ ৩২২-৩২৩


ঐতিহ্য মেনে প্রতিবছরই ক্রিস্টমাস ইভে বেলুড় মঠ সহ রামকৃষ্ণ মিশনের সমস্ত শাখায় ভগবান যীশুখ্রীস্টের পুজো অনুষ্ঠিত হয়। এই নিয়ে অনেকের মনেই কিছু বিভ্রান্তি, কিছু প্রশ্ন দেখা যায়। কেন হয় রামকৃষ্ণ মিশনে যীশুপুজো? কবে থেকে চালু হয়েছিল? কে চালু করেছিলেন? স্বামী বিবেকানন্দের সাথে এই যীশুপুজোর কি কোন সম্পর্ক আছে? চার্চের খ্রীস্টমাস আর এই যীশুপুজো কি এক? আজ আমরা প্রকৃত ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রশ্নগুলির উত্তর অনুসন্ধান করব।


রামকৃষ্ণ মিশনে ক্রিস্টমাস ইভে হওয়া এই যীশুপুজোর উৎস সন্ধানে আমাদের যেতে হবে স্বামী বিবেকানন্দের সন্ন্যাসজীবনের আদিপর্বে—যখন তিনি নরেন্দ্রনাথ দত্ত—স্বামী বিবেকানন্দ তো দূর, স্বামী বিবিদিষানন্দও হন নি। মহেন্দ্রনাথ দত্ত বরাহনগর মঠের সেই সময়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখছেন—


“এই সময় বাইবেল পড়া খুব চলিত। নরেন্দ্রনাথ শরৎচন্দ্রকে ও অপর সকলকে বাইবেল উপাখ্যান বলিতেন ও Nicodemus-এর উপাখ্যানটা সর্বদাই আবৃত্তি করিতেন। নরেন্দ্রনাথ কি এক মহাভাবে বিভোর হইয়া চক্ষু নিমীলিত করিয়া প্রায় এই কথাটি উচ্চারণ করিতেন, “Thou shalt be born again.” সময় অসময় Nicodemus-এর গল্পটি মুখে লাগিয়া থাকিত যীশু যেমন নিজের লইয়া একটা সঙ্ঘ করিয়াছিলেন এবং শিষ্যেরা যীশুর অন্তর্ধানের পর পরস্পরে প্রগাঢ় ভালবাসার সহিত একীভূত হইয়াছিলেন, নরেন্দ্রনাথও সেই দৃশ্যটি চোখে রাখিয়া আপনার অল্পবয়স্ক গুরুভাইদিগকে অজ্ঞাতভাবে শুনাইতে লাগিলেন। যীশুর জীবনটা যেন সেই সময় তাহার আদর্শ হইয়াছিল এবং শরৎ মহারাজেরও সেই ভাবটি তখন প্রবল হইয়া উঠিয়াছিল। হইবারই ত কথা। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের আত্মত্যাগ ও ভগবানের উপর নির্ভরতা, অমানুষিক ভালবাসা এবং অল্পবয়স্ক কতিপয় যুবক একত্রিত হইয়া মনপ্রাণ দিয়া ভগবান লাভের জন্য গুরুর শুশ্রূষা করিতেছে,—যীশুর সহিত এই অবস্থার সৌসাদৃশ্য খুবই হইয়াছিল। যীশুর ছবি আনিয়া দেওয়ালে রাখিতে লাগিলেন। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকে দেখিয়া যীশুর ভাব বুঝিতে লাগিলেন বা যীশুর বই পড়িয়া শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকে বুঝিতে লাগিলেন। একভাব অপর ভাবকে প্রক্ষুটত করিতে লাগিল। এই জন্যই নরেন্দ্রনাথের গল্পটি এমন ভাল লাগিত এবং নিতান্ত অনুগত শরৎচন্দ্রও সেই গল্পটি মনেপ্রাণে হৃদয়ঙ্গম করিতে লাগিলেন।”


— মহেন্দ্রনাথ দত্ত/শ্রীমৎ বিবেকানন্দ স্বামীজীর জীবনের ঘটনাবলী/প্রথম খণ্ড/নরেন্দ্রনাথের যীশুর ভাবে সাধন/পৃষ্ঠাঃ ২৮-২৯


মহেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা অন্যান্য বইতে এই সময় বরাহনগর মঠে, নরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং তাঁর গুরুভাইদের যীশুর ভাবে সাধনা করার বিস্তারিত বিবরণ আছে। এই অবস্থাতেই আরও একটি ঘটনা তাঁদের জীবনে ঘটে, যেটিকে রামকৃষ্ণ ভাবান্দোলনের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য সন্ধিক্ষণ (Turning Point) বললেও বিন্দুমাত্র অত্যুক্তি করা হয়না। স্বামী বিবেকানন্দের সব জীবনীতেই সেই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ আছে। তবে আমরা স্বামী প্রভানন্দের লেখা গবেষণা গ্রন্থ “রামকৃষ্ণ মঠের আদিকথা” থেকে এই বিষয়ে তথ্য নেব।


“এ সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। বাবুরাম-জননী মাতঙ্গিনী দেবীর আমন্ত্রণে নরেন্দ্র, তারক, শশী, কালী, বাবুরাম, শরৎ, নিরঞ্জন, গঙ্গাধর ও সারদা এই নয়জন আঁটপুরে উপস্থিত হয়েছিলেন ১৮৮৬ ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে। মাতঙ্গিনী দেবীর আদর-আপ্যায়নে তাদের দিন আনন্দে অতিবাহিত হয়। নির্জন গ্রামীণ পরিবেশে তাঁরা জপ-ধ্যান-ভজনে মেতে ওঠেন। মাঝে মধ্যে চলতে থাকে আমোদ-আহ্লাদ। সুযোগ পেলেই নরেন্দ্রনাথ গুরুভাইদের এক একজনকে বা একত্রে সকলকে শ্রীরামকৃষ্ণ- জীবনের তাৎপর্য ও তার ভবিষ্যভূমিকা সম্বন্ধে বলতে থাকেন। এক সন্ধ্যায় তরুণ ভক্তগণ একটি ধুনির চারদিকে শান্ত আকাশের নিচে বসে ধ্যান করতে থাকেন। ধ্যানান্তে সৎপ্রসঙ্গ করতে থাকেন নরেন্দ্রনাথ। তেজোদ্দীপ্ত কণ্ঠে উপস্থাপিত করেন যীশুখ্রীস্টের ত্যাগ ও বৈরাগ্যের জীবন। প্রসঙ্গক্রমে বলেন যীশু-শিষ্যদের তপস্যাপৃত জীবনগাথা, খ্রীস্টধর্ম-প্রচারে তাদের আত্মত্যাগের কথা। নরেন্দ্রনাথ যেন ভাবাবিষ্ট হয়ে গুরুভাইদের সামনে উন্মোচিত করেন রামকৃষ্ণ-মহিমার গৌরবোজ্জ্বল এক ভবিষ্যৎ। নেতা নরেন্দ্রনাথ আবেগের সঙ্গে আহ্বান করেন তাদের তন-মন-প্রাণ উৎসর্গ করার জন্য, তবেই শ্রীরামকৃষ্ণ-আবির্ভাব সার্থক হবে। উপস্থিত সকলের প্রাণে শিহরণ জাগে। তাঁরা সমবেতভাবে অগ্নিশিখাকে সাক্ষী রেখে সংসার-ত্যাগের চরম সংকল্প গ্রহণ করেন। পরে সে শুভক্ষণটি ভগবান যীশুর ‘আবির্ভাবের প্রাক-সন্ধ্যা’ জানতে পেরে সকলে বিস্মিত হন। এই ঘটনাটির গুরুত্ব নির্দেশিত করে তাপস তারকনাথ মন্তব্য করেছিলেন, ‘আঁটপুরেই আমাদের সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার সংকল্প দৃঢ় হলো। ঠাকুর তো আমাদের সন্ন্যাসী করে দিয়েছিলেনই—ঐ ভাব আরও পাকা হলো❤️🙏🏻🙏🏻❤️


🌻💮🙏🏻জয় ঠাকুর মা স্বামীজী 🙏🏻🏵️🌼

স্বামীজির বলা এক অদ্ভুত ঘটনা



স্বামীজী একদিন কথাপ্রসঙ্গে একটি অদ্ভুত ঘটনার কথা বললেন। তিনি অবশ্য ঘটনাটির কোনরকম ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করেননি। শুধু বলে গেলেন:


''আমি তখন এক শহর থেকে আরেক শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছি আর একটার পর একটা বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছি। এমনও বহুদিন গেছে একই দিনে বেশ কয়েকটি সভায় বলতে হয়েছে।


একদিন মাঝরাতে ইজিচেয়ারে বসে বসে ভাবছি— আচ্ছা, অনেক তো বক্তৃতা দিলাম। যে-যে বিষয়ে আমি বিশেষভাবে চিন্তা-ভাবনা করেছি, তা তো সবই হয়ে গিয়েছে। এখন যাই বলতে যাবো সেটাই পুরনো কথার পুনরাবৃত্তি হবে, যেটা আমি চাই না, অথচ শিরে সংক্রান্তি! পরের দিনই একটা বক্তৃতা আছে। কি করি?


এইসব সাত-পাঁচ ভাবছি আর নিজের এই দুরাবস্থার জন্য মনে মনে ঠাকুরকে খুব দুষছি। এমনি সময় কি হলো জানো? হঠাৎ ঠাকুরের গলা শুনতে পেলাম। তিনি আমার উদ্দেশ্যে কথা বলে উঠলেন। সেই মুহূর্তে আমার চোখ বন্ধ ছিল; ফলে তাঁকে দেখতে পাইনি। শুধু তাঁর কণ্ঠস্বর শুনতে লাগলাম। একটানা বেশ কিছুক্ষণ বলবার পর তিনি বললেন: 'এই দেখ, তুই এই, এইভাবে বলবি। এর জন্য অত চিন্তা করছিস কেন?'

আমি খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলাম! কিন্তু, সে যাই হোক, পরবর্তী বক্তৃতার বিষয়বস্তু জানতে পেরে আমি তো খুব খুশি। কিন্তু আর কিছু বিস্ময় তখনো যে আমার জন্য অপেক্ষা করছে, তা জানতাম না। জানলাম পরদিন সকালে, যখন আমারই ঠিক পাশের ঘরের এক ভদ্রলোক এসে জিজ্ঞাসা করলেন, 'আচ্ছা মশাই, গতকাল রাতে আপনার সঙ্গে কে কথা বলছিলেন, বলুন তো? তিনি এমন একটি ভাষায় কথা বলছিলেন যে, আমি তাঁর বক্তব্যের বিন্দুবিসর্গও বুঝতে পারলাম না।'


'ঠাকুর বাংলাতেই কথা বলেছিলেন। যাই হোক, ওঁর কথা শুনে আমি একেবারে আশ্চর্য! আমি না হয় শুনলাম, কিন্তু পাশের ঘর থেকে উনি কি করে ঠাকুরের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন, এ আমার কিছুতেই মাথায় এল না।''


🖋️—মন্মথনাথ গঙ্গোপাধ্যায়


জয় ঠাকুর মা স্বামীজী 🙏🏻❤️🌻🌼🌸💮🏵️🌺💐🙏🏻

মানসপুত্র নেতাজী

 🌿 মানসপুত্র নেতাজী 🍁 🌻১৯০২ সালের জানুয়ারীতে সুভাষচন্দ্রের পিতা তাঁকে কটকের মিশনারী স্কুলে ভর্তি করে দিলেন, পুত্রের প্রাথমিক বিদ্যা লাভে...