স্বামীজীর ছাত্র জীবনের একটি মজার ঘটনা:―
বি.এ. পরীক্ষার জন্য টাকা জমা দেওয়ার সময় হয়েছে। নরেন্দ্রর সহপাঠীরা সকলেই টাকা জমা দিয়েছে― কেবল হরিদাস ছাড়া । সে বড় গরিব, টাকা জোগাড় করতে পারেনি। শুধু পরীক্ষার ফি-ই নয় , এক বছরের বেতনও বাকি। হরিদাসের পক্ষে ফি-র টাকাটা কোনো মতে দেওয়া সম্ভব , কিন্তু এক বছরের বেতন দেওয়া অসম্ভব। সব শুনে নরেন্দ্র সব শুনে এগিয়ে এলেন। তিনি জানতেন এরকম বিশেষ ক্ষেত্রে টাকা মুকুব করার ব্যবস্থা আছে আর তা আছে কলেজের বৃদ্ধা কেরানি রাজকুমারবাবুর হাতে। ছেলেরা যখন টাকা জমা দিচ্ছে , নরেন্দ্র তখন রাজকুমারবাবুর কাছে গিয়ে বললেন : " মশায় , হরিদাস দেখছি মাইনেটা দিতে পারবেনা; আপনি একটু অনুগ্রহ করে তাকে মাফ করে দিন। তাকে পাঠালে সে ভালোরকম পাস করবে; আর না পাঠালে সব মাটি।" রাজকুমার বাবুর মেজাজ ভালো ছিল না―মুখবিকৃতি করে বললেন: " তোকে জ্যাঠামি করে সুপারিশ করতে হবে না; তুই যা , নিজের চরকায় তেল দেগে যা। আমি ওকে মাইনে না দিলে পাঠাবো না।" নরেন্দ্র চিন্তায় পড়লেন। তার নিজের পক্ষেও অতো টাকা জোগাড় করা কঠিন―অথচ তাড়াতাড়ি টাকা জোগাড় না করলে বন্ধু পরীক্ষায় বসতে পারবে না। কি করা যায়? মাথায় তার একটা বুদ্ধি খেলে গেল।
বাড়ি না ফিরে সেদিন সন্ধ্যায় তিনি হেদোর কাছে এক গুলির আড্ডার কাছে অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন, আর গুলির দোকানের দিকে যারা আসছে তাদের ভালো করে লক্ষ করতে লাগলেন। হঠাৎ নরেন্দ্রনাথ অন্ধকার থেকে বেরিয়ে একজনের সামনে দাঁড়ালেন। রাজকুমারবাবু! নরেন্দ্রনাথ জানতেন রাজকুমারবাবু প্রতিদিন ওই গুলির আড্ডায় নেশা করতে আসেন। নরেন্দ্রনাথকে দেখে রাজকুমারবাবুর মুখ শুকিয়ে গেছে । সুযোগ বুঝে নরেন্দ্রনাথ বললেন যে, হরিদাসের মাইনেটা যদি তিনি মুকুব না করেন , তাহলে তিনি তার নেশার কথা কলেজময় ছড়িয়ে দেবেন। রাজকুমারবাবু তখন বিপদ বুঝে বললেন: " বাবা , রাগ করিস কেন? তুই যা বলছিস তাই হবে। তুই যখন বলছিস , আমি কি তা না করতে পারি?" কার্যসিদ্ধি হয়েছে দেখে নরেন্দ্রনাথ ফিরে চললেন। তিনি চোখের আড়াল হতেই রাজকুমারবাবুর এদিক-ওদিক দেখে গুলির আড্ডায় ঢুকে পড়লেন।
পরদিন সকাল হতে না হতেই নরেন্দ্রনাথ হরিদাসের বাড়িতে গিয়ে বন্ধুকে বললেন : " ওরে খুব ফূর্তি কর, তোর মাইনের টাকাটা আর দিতে হবে না।" তারপর গত সন্ধ্যার ঘটনাটা আনুপূর্বিক বর্ণনা করে দুজনেই হাসিতে ফেটে পড়লেন।
Book Name:- " সবার স্বামীজী "
থেকে সংগৃহিত।
By স্বামী লোকেশ্বরানন্দ।
জয় ঠাকুর মা স্বামীজী🙏
🏵️🌺🏵️🌺🌿🌿🌾🌾🌻🌼🌻🌼🌼🏵️🌾🏵️🌿🏵️🌾🏵️🌿🏵️🌾🏵️🌿🏵️